৬৩৬ সন। ইয়ারমুকের ময়দান। ইসলামের অগ্রযাত্রা প্রতিরোধে খৃষ্টীয় জোট হেনেছে মরণ ছোঁবল। চারিদিকে শুধু লাশের ছড়াছড়ি, লাশের গন্ধে ভারী হয়েছে আকাশ বাতাস। চারিদিকে শোকের মাতম, বাঁচার আকুতি, আর্ত-চিৎকার।
এর একপাশে পানি পানি অস্ফুট রবে ডেকে যায় কেউ কেউ। ছোট্ট পানির মশক হাতে এগিয়ে যান হযরত আবু জাহাম বিন হুজাইফা (রাঃ)। এগিয়ে যান চাচাতো ভাইয়ের পানে, শাহাদাতের দোর গোড়ায় হযরত হারেস বিন হিশাম (রাঃ)। এর ফোঁটা পানির জন্য হাহাকার। তৃষ্ণার্ত ঠোটের কাছে পোঁছে যায় পানির মশক। তবু থেমে যান তিনি, পানির মশকের দিকে চাতকের ন্যায় তাকিয়ে আছেন হযরত ইকরামা বিন আবি জাহল (রাঃ)। ফিরিয়ে দিলেন পানির মশক, ভাইয়ের তৃষ্ণার্ত মুখ দেখে ভুলে গেলেন নিজের যন্ত্রণা, ইশারায় দেখালেন, যাও, আগে ইকরামাকে পানি পান করাও।
পানির মশক নিয়ে ছুটে যান ইকরামার (রাঃ) পানে, তৃষ্ণার্ত চোখ চকচক করে ওঠে আনন্দে, যেন এ পানিটুকুর জন্যই চলছে ইয়ারমুকের কঠিন সমর। পানির মশক তুলে নিলেন হাতে, ছোঁয়াবেন ঠোটে, থেমে যায় হাত হঠাৎ। চোখ চলে যায় হযরত আইয়াশ বিন আবি রাবিয়ার (রাঃ) পানে, তাকিয়ে আছেন তৃষ্ণার্ত নয়নে, এক ফোঁটা পানির জন্য হাহাকার শুধু। ফিরিয়ে দিলেন পানির মশক, বললেন, যাও, আগে আইয়াশকে পানি পান করাও।
পানির মশক নিয়ে ছুটে চলেন তিনি, ছুটে যান আইয়াশের (রাঃ) পানে। তার কাছে পৌঁছে দেখেন তিনি পান করেছেন শাহাদাতের অমিয় সুধা। পৃথিবীর কোন পাণীয়ে আর তৃষ্ণা মেটানোর প্রয়েোন পড়ে না তার। আবু জাহান (রাঃ) ফিরে আসেন ইকরামার (রাঃ) কাছে, তার ঠোটও ছুয়েছে শাহাদাতের সুধা, পার্থিব পানির কি বা মূল্য তার কাছে। ফিরে আসেন জাহাম, ফিরে আসেন চাচাতো ভাইর কাছে। কিন্তু বড্ড দেরী হয়ে গেছে তার, হারেস বিন হিশাম চলে গেছেন রবের দরবারে, চলে গেছেন নির্ধারিত জান্নাতে, যার তলদেশে প্রবাহিত সুমিষ্ট জলধারা।
ইসলামের ইতিহাসের পাতায় পাতায় ভ্রাতৃত্বের নিদর্শন সোনালী সূর্যের মতো দীপ্তিময়। রক্তের বন্ধনের চেয়েও দৃঢ় সে ভ্রাতৃত্ব। নিজের অধিকারকে তুচ্ছ করে অপর ভাইকে অগ্রাধিকার দেয় যে জাতি, সে জাতির চেয়ে শ্রেষ্ঠ জাতি মিলে কি কোথাও?
অথচ একবারও কি ভেবে দেখব না কেন তারা আজও অমর, কেন তাদের কথা স্মরণ হলে গর্বে বুক ভরে যায়, শ্রদ্ধায় মন গলে যায়? ইসলামের ভ্রাতৃত্বের দৃঢ বন্ধন সে তো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফল, জামাত বদ্ধ জিন্দেগীই তার কারণ।
অনেকেই বলেন একজন মুসলিম হিসেবে নামাজ রোজা করলেই তো চলে, ইসলামের নামে রাজনীতি কেন? ইতিহাস বিমুখ মুসলিমরা আজ লাঞ্ছিত বিশ্বব্যাপী, সে তো অনৈক্যেরই ফসল, কিছুতেই বোঝে না ওরা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে পড়ে কপালে দাগ ছড়ান যে মুসলিম, সে জানেনা নামাজ তাকে কি শেখালো। নামাজ তাকে পাঁচবার বলে দেয়, ইসলাম একাকী পালনের বিষয় নয়, ইসলাম ব্যক্তিগত বিষয় নয়, ইসলাম সংগঠিতভাবে অনুসরণের নাম, ইসলাম জামাতী জিন্দেগীর নাম। স্বচ্ছলদের জন্য হজ্জের বিধান, তবু ভিক্ষে করেও হজ্জে যায় অনেকে, আল্লাহর ভালোবাসায়, রাসূলের প্রেমে উদ্বেলিত হয়ে। দেখেল লাখো লাখো মুসল্লী একমুখী হয়ে এক ইমামের ভাষণ শোনে, এক ইমামের অনুসরণে নামাজ আদায় করে, তবু হুশ হয়না ওদের। বলে ইসলাম তো ব্যক্তিগত ব্যাপার, ইসলাম নিয়ে রাজনীতি কেন?
মূর্খরা ভেবে দেখে না, আল্লাহর পথে ঐক্যবন্ধ আন্দোলনের নামই ইসলাম। ব্যক্তিগত আমল দিয়ে অমন ভ্রাতৃত্বের ইতিহাস গড়েছেন ক’জন পূণ্যবাণ? হ্যা, হয়তো দু’এক জন উৎরে গেছেন ভালোবাসার অগ্নী পরীক্ষায়, তাদেরও কে সালাম। স্মরণ করি খৃষ্টীয় পন্ডিত স্যার ফিলিপ সিডনীর কথা, তিনি অনুসরণ করেছিলেন মুসলিম ভ্রাতৃত্বের, মৃত্যু সজ্জায় যিনি বলেছিলন “Thy necessity is yet greater than mine” । কিন্তু এমন দৃষ্টান্ত বিরল, দু’এক ব্যক্তির এমন আমল জামাত বন্ধ জীবনের বিকল্প হতে পারে কি?
ইসলামী আন্দোলন ছাড়া ইসলাম অসহায়, ঠিক যেন হৃদস্পন্দহীন কোমার রোগী। ইসলামের পুনরুত্থানে, ভ্রাতৃত্বের পুনর্জাগরণে, মানবতাবাদের অন্বেষণে ইসলামী আন্দোলনের খুব বড় প্রয়োজন। যে ব্যক্তি সমাজে বসবাসকে যৌক্তিক মনে করে, একাকী বন্যজীবনকে ঘৃণা করে, যে ব্যক্তি শহরের রাস্তা দিয়েও একাকী রাতে চলতে পায় ভয়, সে কি করে ব্যক্তিগত আমলে সফলতার স্বপ্ন দেখে। জামাতবন্ধ জীবন ছাড়া যে একদন্ড চলতে পারে না সমাজে, তাকে যদি ইসলামী আন্দোলনের গুরুত্ব বুঝাতে হয় তবে সে সব মুসলিমদের জন্য করুণা ছাড়া আর কি জুটতে পারে।
জেগে ওঠ ইসলামের সৈনিকেরা, জেগে ওঠো সত্যের পূঁজারীরা, জেগে ওঠো কল্যাণ অনুসন্ধানীর দল, ঝাপিয়ে পড়ো ইসলামী আন্দোলনে, পরিশুদ্ধ কর পুঁতিগন্ধময় নশ্বর জীবনটাকে, এগিয়ে চলো, জামাত শিবির তোমারই অপেক্ষায়।
পরশপাথর নামক একটি গল্প পড়েছিলাম অষ্টম শ্রেণীতে ।
তার বিষয়বস্তু ছিল অাপনার লেখার অনুরুপ । অাপনার লেখা পড়ে মনে হয়েছে পরশপাথর গল্পটি অামার না পড়লে ো চলত । কারণ অাপনার লেখাটি ইব্রাহিম খার সেই গল্পের চেয়ে অনেক বেশী পরিপুষ্ট ।
.
হযরত উমর (রা)বলেছেন, সংগঠন ব্যতীত ইসলাম
অস্তিত্বহীন । কোন নবী রাসূল এর জীবন রাজনীতিশূন্য ছিলনা । ইসলামের মৌলিক চারটি ইবাদাত নামায,রোযা,হজ্জ এবং যাকাত সর্বাংশে সামাজিক এবং সাংগঠনিক চেতনার অালোয় উদ্ভাসিত । সাহাবায়ে কেরামদের জীবনের সব কিছু জুড়েছিল ইসলামী অান্দোলন । জামাত শিবিরের লোকেরা কেন জীবন দেয়, কেন এত অত্যাচার নিপীড়ন সহ্য করে, প্রিয় কী্ একবার ভেবে দেখবেন কী সেই চেতনা যার অাবেদনে তারা তুচ্ছ করে জীবন ।
[উত্তর দিন]
Khub e valo lekha hoise
[উত্তর দিন]
ভাই আসসালামু আলাইকুম।
সময়োপযী একটা পোষ্ট।
ধন্যবাদ।
[উত্তর দিন]
ইতিহাসটা জানলেও সাহাবীদের নামগুলো অজানা ছিল।
সম্পূর্ণ লেখাটির মন্তব্য কি করা উচিত, বুঝতে পারছিনা। যাঁর কাছে সবচাইতে উত্তম পুরষ্কার রয়েছে সেই রাব্বুল আ’লামিনই নির্ধারণ করবেন ইনশাল্লাহ্। জাযাকাল্লাহু খাইরান। আমিন। সুম্মা আমিন।
[উত্তর দিন]