অস্ত্রের মুখে প্রাণ বাঁচাতে জরুরী অবস্থা জারী করতে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। আসুন জেনে নেই সে দুঃস্বময়ের কথা:
মানবজমিন রিপোর্ট: কামানের ভয় দেখানো হয়েছিল ইয়াজউদ্দিনকে

ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর সময়ে বঙ্গভবনে একটি দিনও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেননি। সারাক্ষণ একটা আতঙ্ক তাকে তাড়া করে ফিরতো। তিনি এতটাই ভীতসন্ত্রস্ত থাকতেন যে এক পর্যায়ে অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার হাত-পা কাঁপতো। তিনিও মাঝে মাঝে শুনেছেন দেশে মার্শাল ল’ জারি হতে পারে, কিন্তু তা হলে তার কিছুই করার ছিল না। কারণ, মার্শাল ল’ জারি করার জন্য বঙ্গভবনের যাকে দরকার ছিল সেই সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আমিনুল করিমকে তারা আগেই ম্যানেজ করে নিয়েছিল। তবে জেনারেল মইন মার্শাল ল’ জারি করতে চাননি। চাইলেও পারতেন না। কারণ ওয়ান-ইলেভেনে যারা সমর্থন দিয়েছেন তারাও মার্শাল ল’ জারি হোক তা চাননি।
স্ত্রীকে ফোন করতে চেয়েছিলাম সে সময়ও দেয়া হয়নি : মানবজমিনের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ইয়াজউদ্দিন
ভাল আছি। শরীর মাঝখানে বেশি অসুস্থ ছিল। পেশাগত ব্যস্ততা নেই। তারপরও ব্যস্ত থাকি বাসায় নিজের ভুবনে। লেখালেখি করে সময় কেটে যায়।
বই লেখার কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। আস্তে আস্তে লিখছি। শেষ করতে আরও সময় লাগবে। বইটি প্রকাশ করার ইচ্ছে আছে। বইয়ের মধ্যে আমি সব লিখবো। সেখানে আমার অনেক অজানা কথাও পাঠকরা জানতে পারবেন। এখন সব কিছু বলার মতো সময় আসেনি। আশা করছি বইটি যখন শেষ করে প্রকাশ করবো তখন সব প্রকাশের মতো সময় আসবে। তিনি বলেন, বইটির মুখবন্ধে আমি সব কিছুরই একটি সারসংক্ষেপ দিব। আমার কাছ থেকে যারা আমার সময়কার কথা জানতে চান তারা বইটি পড়লে জানতে পারবেন। বিশেষ করে আমার প্রধান উপদেষ্টা হওয়া, জরুরি অবস্থা জারি ও এরপরের দুই বছরের কথা। তবে চিন্তা হয় জীবদ্দশায় বইটি প্রকাশ করে যেতে পারবো তো? বেশ কয়েকজন প্রকাশক বইটি প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কথা বলেছেন।
ওই সময়ে দেশে যে পরিস্থিতি ছিল এবং ওই দিন যে পরিস্থিতি হয়েছিল তাতে জরুরি অবস্থা জারি না করে উপায় ছিল না। জরুরি অবস্থা জারি না করলে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারতো। জাতিসংঘের ওই চিঠি দেখে ভাবলাম দেশে লাখ লাখ সৈন্য ফেরত আসবে। তারা ফিরে এলে ক্ষেপে যাবে, সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে, কেবল তাই নয় দেশে গোলমাল হতে পারে, মারামারি, কাটাকাটি হবে, মানুষ মারা যাবে, এটা সহ্য করা যাবে না। আরও অনেক কিছুই ঘটতে পারতো। জরুরি অবস্থা জারির আগেও মনে হয়েছে আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবো। কিন্তু ওই সময়ে পরিস্থিতি এমন হলো যে, এর বিকল্প ছিল না। জরুরি অবস্থা জারি করতেই হলো।
দুপুরে সামরিক সচিব জানালো স্যার তিন বাহিনী প্রধান আসবেন আপনার সঙ্গে দেখা করতে। জানতে চাইলাম কখন এবং কি কারণে? তিনি বললেন, স্যার দুপুরে আসার কথা জানিয়েছেন। কারণ জানাননি। আমি বুঝলাম তিনি কিছু একটা এড়িয়ে গেলেন। কিন্তু তখন অত গভীরভাবে বিষয়টি নিয়ে ভাবিনি। ভেবেছি তারা তিনজন একসঙ্গে আসছেন নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু হবে। আমি দুপুরে ভাত খেয়েছি। এরপর অফিস রুমে ঢুকে দেখি তিন বাহিনী প্রধান ও আরও কয়েকজন আমার অফিসে বসে আছেন। তারা আমাকে সম্মান জানালেন। দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করলেন। বললেন, স্যার জরুরি অবস্থা জারি করা প্রয়োজন। যে কোনভাবেই হোক স্যার দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। যদি তা না হয়, চলমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে জাতিসংঘ বাংলাদেশের সকল ফোর্স ফেরত পাঠাবে। বলেই আমার টেবিলের উপর একটি চিঠি রাখলেন। দেখালেন জাতিসংঘের চিঠি। আমি চিঠিটি দেখলাম। জেনারেল মইনের কথা শুনে, চিঠি দেখে বিমানবাহিনী প্রধান ও নৌবাহিনী প্রধানের কাছে মতামত চাইলাম। তারাও একই মত দিলেন। আমি তাদের প্রস্তাবটি ভেবে দেখার জন্য সময় নিতে চাইলাম। তখন বললাম আপনারা আমাকে একটু সময় দিন আমি আমার ওয়াইফের সঙ্গে একটু আলোচনা করে নেই। তারা বললেন, স্যার সময় দেয়া যাবে না। যা করার এখনই করতে হবে। না হলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়ে যাবে। আমরাও ফিরে যেতে পারবো না। আমি তাদের কথা বিশ্বাস করলাম। অবস্থা বিবেচনা করে জরুরি অবস্থা জারি করার কথা ভাবলাম।
জরুরি অবস্থা জারির জন্য আদেশ দিলাম। প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। আর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদানের জন্য প্রস্তুতি নিলাম।
তারা দুপুরে এসেছিলেন। অনেক কিছুই ঘটেছে। তবে সব কথা বলার মতো সময় এখনও আসেনি। আমি আমার বইয়ে সব কথা লিখবো। বই লিখছি। বই পড়ে সব জানতে পারবেন। জরুরি অবস্থা জারির বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে হঠাৎ করেই পরিস্থিতিটা একটু গরম হয়ে গেল। থাক এ প্রসঙ্গ। জেনে রাখেন। তবে এখন প্রকাশ করার দরকার নেই।
জেনারেল মইন তার মতো করে তার অবস্থান থেকে তার বইয়ে লিখেছেন। তার বইটি আমি পড়েছি। তিনি আরও কিছু কিছু বিষয়ে লিখতে পারতেন এমনটাই মনে হয়েছে। আমিও আমার অবস্থান থেকে লিখবো। সেদিন সবই জানবেন।

ওই দিন জরুরি অবস্থা জারির পর ভাষণ দিলেন, ওই ভাষণে আপনার কোন আপত্তি ছিল কি?
ভাষণ দিয়েছিলাম। ভাষণ তৈরির পর ওটা কাটাকাটি করিনি। বিটিভি থেকে ভাষণ রেকর্ডের জন্য সব সরঞ্জামাদি নিয়ে আসা হলো। ভাষণ রেকর্ড করে প্রচার করা হলো রাতে।
থাক এসব কথা।
আমিও শুনেছি। ওই সময়ে আমার পক্ষে চিঠি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ ছিল না। ইফতেখার চৌধুরীর কথাও শুনেছি। যা শোনা যায় তা সত্যি হতেও পারে। চিঠিটি আমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা ছিল না। তারা চিঠি দেখিয়েছিলেন সেটি আমি দেখেছি। আমি ওই দিন বঙ্গভবনে অফিস করছিলাম। আমার স্ত্রী ছিলেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি জানতেন না বঙ্গভবনে কি হয়ে যাচ্ছে। তাকে ফোন করতে চেয়েছিলাম। সেই সময় দেয়া হয়নি। দিলে তার সঙ্গে আলোচনা করতে পারলে পরামর্শ নিতে পারতাম। কারণ তখন আমার আশেপাশে পরামর্শ দেয়ার মতো আর কেউ ছিল না।
তিনবাহিনী প্রধান রাত দশটার দিকে চলে গেলেন। এরপর আমি আমার রুমে চলে যাই। সেখানে গিয়ে আমার স্ত্রী’র সঙ্গে দেখা হয়। রাতের খাবার খাওয়ার জন্য বসি কিন্তু খেতে পারিনি। স্ত্রী’র সঙ্গে আলোচনা করলাম। এরপর শুতে গেলাম। কিন্তু ঘুম আসেনি। মনে হয়েছে দেশ ঠিক মতো চলবে তো। দেশে আবার না কোন বিশৃঙ্খলা হয়ে যায়। রাজনৈতিক দলগুলো না আবার কোন ঘটনা ঘটিয়ে বসে। সব মিলিয়ে নানা চিন্তার মধ্যেই রাত কাটলো। এরপর থেকে যত দিন দেশে জরুরি অবস্থা বহাল ছিল ততোদিন মনে হয়েছে, দেশটা যাতে ভালভাবে চলে। একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। সারাক্ষণ টেনশনেই কেটেছে।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ফখরুদ্দীনকে কে নির্বাচন করলো- আপনি না অন্য কেউ?
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ফখরুদ্দীনকে আমি নির্বাচন করিনি। আমি যতটা জানি প্রধান উপদেষ্টা করার জন্য প্রথমে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসকে প্রস্তাব দেয়া হয়। তিনি রাজি হলেন না। তিনি ড. ফখরুদ্দীনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা করার জন্য। তার সঙ্গে আলোচনার পর তিনি রাজি হওয়াতে তাকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়। তিন বাহিনী প্রধান এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের পর তিনি বাকি উপদেষ্টাদের নিয়োগ করেন। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য আমার মত নেয়ার দরকার ছিল। বাকি উপদেষ্টা নিয়োগে আমার মতামতের দরকার হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা ও তাকে যারা পরামর্শ দিয়েছেন তারা নিয়োগ করেছেন।
না, এখন তা মনে হয় না। কারণ ওই দিন জরুরি অবস্থা জারির কারণে নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল। তারা বিলম্বে হলেও একটি নির্বাচন করে দেশে আবার গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছেন। গণতান্ত্রিক সরকার ফিরে আসাতে মনে হয় ভালই হয়েছে। অনির্বাচিত সরকার বিদায় নিয়েছে। কারণ গণতন্ত্রের কোন বিকল্প নেই। যে কোন মূল্যে দেশে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতেই হবে। জরুরি অবস্থা জারি হলেও দেশের তেমন কোন ক্ষতিই হতো না যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতো। তারা দুই বছর সময় নিয়ে নিলো।

জরুরি অবস্থা জারি না করলে কি আর হতো?
জরুরি অবস্থা জারি না করলে দেশে বিশৃঙ্খলা হলে আমি মরে যেতে পারতাম। আমি মরে গেলে দেশে সঙ্কট আরও বাড়তো। সমস্যার সমাধান হতো না। শূন্যতা তৈরি হতো। জাতি আরও সঙ্কটে পড়তো। আমি চিন্তা করেছি দেশকে রক্ষা করতে হবে। আমাকে বেঁচে থেকেই যা করার করতে হবে। আমাকে জেলে নিয়ে যাওয়া হতে পারতো। এই ভয়তো ছিলই। দেশে দুজন প্রেসিডেন্ট মারা গেছেন আমি চাইনি মারা যেতে। আমি চেয়েছি যে করেই হোক দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। এই জন্য তিন বাহিনী প্রধান যে প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন তাতে আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আপনি বলেন, ওই দিন দেশে যদি কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতো তাহলে এর দায়দায়িত্ব কে নিতো? আমাকেই নিতে হতো। কিন্তু জরুরি অবস্থা জারি করলে তেমন কিছুই ঘটবে না মনে করেই করেছি। তাছাড়া, আমি কোন অসাংবিধানিক কাজ করিনি। সংবিধান অনুযায়ী কাজ করেছি। জরুরি অবস্থা জারির কথা স্পষ্টই লেখা আছে সংবিধানে। এনিয়ে কেউ কেউ বিতর্ক করতে পারেন সেটা তাদের ব্যাপার। তিন বাহিনী প্রধান আমার কাছে কোন অসাংবিধানিক প্রস্তাব নিয়ে আসেননি। তারাতো চাইলে মার্শাল ল’ জারি করতে পারতো। তাতো করেননি।
রাজনৈতিক হানাহানি যে পর্যায়ে গিয়েছিল তাতে সে সুযোগ ছিল। কিন্তু জেনারেল মইন মার্শাল ল’ জারি করার সুযোগ নেননি। তিনি মার্শাল ল’ জারির পক্ষে ছিলেন না। তিনি চেয়েছিলেন দেশে শান্তি ফিরে আসুক এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও অন্যান্য যে সব বিদেশী শক্তি বাংলাদেশের ব্যাপারে মাথা ঘামায় তারা কেউ চাননি এ দেশে মার্শাল ল’ হোক। জেনারেল মইন সব সময়ই গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার কথা বলতেন।
আমার অফিসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন যিনি আমাকে পছন্দ করতেন না। আমার সম্পর্কে নানা কথা বলতেন অনেকের কাছে। তিনি আমাকে প্রায়ই বলতেন স্যার আমি এখানে থাকবো না। তিনি আমাকে বিপদে ফেলতে পারতেন। কিছুু কিছু বিষয়ে আমার কাছে হাইড করেছেন এখন বুঝি। তিনি সহযোগিতা করলেই মার্শাল ল’ জারি হতে পারতো। কারণ তিনি না জানালে আমি প্রটোকল অনুযায়ী অনেক কিছুই জানতে পারতাম না।
একথাটি আমার জানা নেই। কারণ তিনি কোনদিনও বলেননি স্যার আপনাকে সরে যেতে হবে। আপনি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। কিংবা অন্য কিছু। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের দুই বছরে কখনোই ওই ধরনের কোন কিছু আকার ইঙ্গিতেও প্রকাশ করেননি। আমি যতটা জানি তিনি প্রেসিডেন্ট হতে চাননি। প্রেসিডেন্ট হতে হলে অনেক দিকের সমর্থন লাগে। তিনি গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্যই কাজ করেছেন।
এই কথাটি ঠিক নয়। তিনি কখনো আমাকে বলেননি। স্যার আমার চাকরির মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে দিন। তিনি তার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আমাকে অনুরোধ করেননি। তিনি বলতেন, স্যার আপনি দেশে একটি অবাধ, নিরপক্ষে নির্বাচনের জন্য ব্যবস্থা নিন। যা যা করণীয় করেন। তার চাকরির মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর জন্য ওই সময়ের সরকারের ইচ্ছে ছিল। জেনারেল মইন চাইতেন তিনি যেন অবসরে যাওয়ার আগে নির্বাচনে
সরকারকে সহযোগিতা করে যেতে পারেন। এটা করা হয়েছিল যাতে তিনি সেনাবাহিনীকে নিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করতে পারেন।
আচ্ছা বলুনতো চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার পর আপনি কেন প্রধান উপদেষ্টা হলেন?
আমি সংবিধানে উল্লিখিত নিয়ম অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করার জন্য চেষ্টা করেছি। যখন প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের কোন অপশনই কাজে লাগানো যায়নি, সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়ে গেল তখন আমাকেই প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিতে হলো।

শোনা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নাকি আপনাকে প্রধান উপদেষ্টা হতে বলেছিলেন?
না, আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেইনি। আপনারা দেখেছেন ওই সময়ে সংবিধান অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা বানানোর জন্য কত প্রকার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার জন্য যিনি প্রথমে ছিলেন তিনি হলে আওয়ামী লীগ মানবে না- এ কারণে তিনি রাজি হলেন না। পরে দুই জনের ব্যাপারেও আপনারা দেখেছেন। আসলে ওই সময়ে আমি দায়িত্ব না নিলে সমস্যা বাড়তো।
এই অভিযোগটি একেবারেই ঠিক না। আমি কোন দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করিনি। আমি চেয়েছিলাম সমস্যা যা তৈরি হয়েছে তা আলোচনা করেই সমাধান হোক। রাজনৈতিক ভাবেই সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দুইজনও চেয়েছিলেন আলোচনা করে সমস্যার সমাধান হোক। এই জন্য দুই পক্ষের দুইজন অর্থাৎ বিএনপির ওই সময়ের মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল সঙ্কট মোকাবিলা ও সমাধানের জন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। কিন্তু সমাধান হলো না। আমি আজও একটা বিষয় ভেবে বের করতে পারি না কেন তারা আলোচনা করে সফল হতে পারলেন না। তারা কার স্বার্থ দেখেছিলেন। তারা যদি তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতেন তাহলে আমার অধীনেই তিন মাসের মধ্যে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারতো। কিন্তু তারা তা করতে পারলেন না। নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আওয়ামী লীগ সরে গেল। আমি মনে করি ওই দিন তারা আলোচনায় ব্যর্থ না হলে, নির্বাচন হয়ে গেলে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার দরকার হতো না। পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর সময় নিতে পারতো না।
এটা ভুল ধারণা। আমি নিরপক্ষে নির্বাচনই করতাম। সব প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলাম। শেষ পর্যন্ত হলো না। সুযোগ পেলাম না নির্বাচন করার। আওয়ামী লীগ এখন দেশ পরিচালনা করছে, তারা যে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে ওই সময়ে আমি দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলাম। তাহলে তারা তো ভুল মনে করেছিল যে, আমি প্রধান উপদেষ্টা থাকলে আমার অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হবে না।
অনেকেই বলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। বিরোধী দল বলে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হয়েছে। এটা তারা তাদের অবস্থান থেকে বলেন। আমি যেটা বলবো সেটা হচ্ছে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন করে নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজালো। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুই কমিশনারকে নিয়োগ দিলেন। তারা নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার পুনর্গঠন করলেন। এতে করে অনেক এলাকায়ই দেখা গেছে, মানুষ চিরাচরিত নিয়মে যে এলাকায় ভোট দিয়েছেন নবম সংসদ নির্বাচনে অনেকেরই কেন্দ্র বদল হয়েছে। দূরের কারণে তারা ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অনেকেরই দূর-দূরান্তে ভোট কেন্দ্র হওয়ার কারণে তারা যেতে পারেননি। ভোট দিতে পারেননি। সবাই ভোট দিতে পারলে ভাল হতো। আমি নির্বাচন নিয়ে এটাই বলবো, দেশে গণতান্ত্রিক সরকার ফিরে আসা বড় প্রয়োজন ছিল। নির্বাচনের মাধ্যমে তা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দেশ পরিচালনা করছে ভালই। তবে আমার মনে হয় তাদেরকে আরও নিরপেক্ষভাবে দেশ পরিচালনা করতে হবে। বিরোধী দলের প্রতি আরও সহনশীল হতে হবে। তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করা দরকার। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির যে সঙ্কট রয়েছে তা দূর করতে হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমি মনে করি এই কাজগুলো সরকার করতে পারলে এবং জনগণের কাছে দেয়া ওয়াদা পূরণ করতে পারলে ভাল হবে। কারণ জনগণ তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে- এজন্য অপেক্ষা করছেন।
এখন আবার ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময়ে আসি, সেই সময়ের কথা মনে হলে আপনার কি মনে হয়?
আমার মনে হয় দেশের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খুব সীমিত। তার ক্ষমতা বাড়ানো দরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রধান উপদেষ্টা তার নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদদের নিয়ে দেশ পরিচালনা করেছেন। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারের মেয়াদ তিন মাস নয়, সিদ্ধান্ত নেন একবারে সরকারের মেয়াদ দুই বছর করবেন। তারা করেছেনও। কিন্তু ক্ষমতা থাকলে আমি দুই বছর সরকার পরিচালনা করার বিষয়টি মেনে নিতাম না। আমার ওই সময়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা থাকলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারতো।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে আলোচনা করেননি। আমার মনে হয়, দুই বছর সময় নেয়াটা বেশি হয়ে গিয়েছিল। এটা বোধ হয় তারা করেছিল রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের জন্য।
এটা তারা ভাল বলতে পারবেন। আমার যেটা মনে হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল মাইনাস টু ফর্মুলা। এটি তাদের ব্যর্থতা। তারা রাজনীতি থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার চেষ্টা করেন। অনেকেই মনে করতে পারেন সরকারের ওই মাইনাস টু ফর্মুলার খবর আমি জানতাম। কিন্তু আমি মাইনাস টু ফর্মুলার ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। আমার সঙ্গে এই প্রসঙ্গে কেউ আলোচনা করেননি। আমাকে জানালে বা আমার সঙ্গে আলোচনা করলে আমি মাইনাস টু ফর্মুলার ঘোর বিরোধিতা করতাম। কারণ আমি জানি, এই পরিকল্পনা করে কেউ সফল হতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতিতে হাসিনা-খালেদাকে চেনেন। তারা অন্য কিছু বোঝেন না। যে কারণে তারা তাদের পছন্দমতো ভোট দেন। আমি তাদের মাইনাস ফর্মুলার ব্যাপারে আমার কাছের মানুষদের বলতাম দশ বছর পরে হলেও এদেশে হাসিনা-খালেদা ফিরে আসবেন। এটা কেউ আটকাতে পারবে না।
আমি আর একটু বলে রাখি, রাজনীতি এত সহজ নয়। চাইলেই সেখানে নতুন কাউকে বসানো যায় না। তারা মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বিএনপিকে ও তোফায়েল আহমেদসহ আরও কয়েকজনকে দিয়ে আওয়ামী লীগকে ভাঙার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারেনি। তবে তাদের দলের ক্ষতি হয়েছে। হাসিনা-খালেদা আবার ফিরে এসেছেন। যারা বাদ পড়ার তারা বাদ পড়ে গেছেন। আমি মাইনাস টু ফর্মুলা কোনদিন সমর্থন করিনি এবং করতাম না। কারণ আমি একটি পক্ষ অবলম্বন করি এটা সবাই জানেন। আমি পক্ষ করি বলেই তারা আমাকে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন করেছিল। বেগম খালেদা জিয়া আমাকে প্রেসিডেন্ট করেছিলেন, তাকে কি রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ফর্মুলা মানতে পারি? কোনদিনও পারি না। গণতন্ত্রের জন্য তার অবদান রয়েছে। দেশের উন্নতিতে তার অবদান রয়েছে। তেমনি শেখ হাসিনা দেশের গণতন্ত্র আনা ও তা টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি রাজনীতি করছেন দীর্ঘদিন। দেশের মানুষ তাকে ভালবাসে। তাকে মাইনাস করার ফর্মুলাও কোনদিন মেনে নিতে পারিনি। দুই নেত্রীরই দেশের জন্য অবদান রয়েছে।
দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তার করা হবে এটাও আমি জানতাম না। দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তার করা হবে এমন বিষয় তারা আমার সঙ্গে আলোচনা করলে আমি কোনভাবেই তা মেনে নিতাম না। তারা আমার সঙ্গে এই বিষয়ে কোন আলোচনাই করেননি। ড. ফখরুদ্দীন আহমদ তার উপদেষ্টাদের নিয়ে দেশ পরিচালনা করেছেন। তিনি তার মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি সিদ্ধান্ত নিতেন বলেই তো কোনদিন দায়িত্ব পালনকালে তিনি কোন চাপের মুখে আছেন, বাধ্য হয়ে কোন কাজ করছেন এমনটা বলেননি। তিনি তা না বলাতে বোঝা যায় যা করেছেন এতে তার ইচ্ছা ছিল। যারা তাকে সহযোগিতা করেছেন ও পরামর্শ দিয়েছেন তাদের কথা মেনে নিয়েছেন। আপনারা জানেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টা তার মতো করে দেশ চালান। প্রেসিডেন্টের কাছে তাদের খুব বেশি দরকার হয় না।
আমি রুটিন দায়িত্ব পালন করেছি।
এই প্রসঙ্গ থাক। পরে বলা যাবে।
ড. ফখরুদ্দীন আহমদ প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার আগে আমার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল না। তাকে চিনতাম। তিনি গভর্নর হওয়ার আগে একদিন আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি মুন্সীগঞ্জের সন্তান। এ কারণেই মুন্সীগঞ্জের বেশ কয়েকজন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসলে তিনি আসেন। এরপর তিনি গভর্নর হওয়ার পর তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক কখনোই গড়ে ওঠেনি। যে কারণে তার সঙ্গে আমার যোগাযোগও ছিল না।
ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার পর আমার উপলব্ধি হচ্ছে মাস্টার মানুষের রাষ্ট্র পরিচালনা করা উচিত নয়। রাজনীতি করাও তার কাজ নয়। আমরা মাস্টার মানুষ। স্টুডেন্ট পড়ানো কাজ। আমরা চিন্তা করি সরল ভাবে। স্টুডেন্টদের আমাকে পড়াতে হবে। তারা আমার কাছ থেকে ভাল শিক্ষা পেয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করবে। নিজের জ্ঞানকে কাজে লাগাবে। আমাদের এই চিন্তার সঙ্গে রাজনৈতিক চিন্তাধারার অনেক ফারাক। সেখানে রয়েছে অনেক মারপ্যাঁচ। রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ আমি ভাল বুঝি না। আমি প্রেসিডেন্ট হলেও রাজনীতির অনেক মারপ্যাঁচ বুঝিনি। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি রাজনীতির মারপ্যাঁচটা ভাল বুঝলে সে হিসেবে সিদ্ধান্ত নিলে অনেক কিছুই অন্য রকম হতে পারতো। চিন্তা করেছি দেশ ভালভাবে চলবে, আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবো। সেই ভাবে কাজ করেছি।
মাঝে মাঝে মনে হয় ওইদিন জরুরি অবস্থা জারি না করে আর কি করতে পারতাম। কিন্তু মনে হয় সংঘর্ষ বন্ধ করতে আর উপায় ছিল না। এছাড়া যত দিন দায়িত্ব পালন করেছি মনে হয়েছে আমি যথাযথভাবে আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আমি কোন দুর্নীতি করিনি। কোন অন্যায় করিনি। আমার অবস্থান থেকে দেশের জন্য যেটা ভাল হবে সেটাই করেছি।
ক্ষমতার লোভ আমার কোনদিন ছিল না। আমি ক্ষমতায় আজীবন থাকতেও চাইনি। আমি জানতাম আমার দায়িত্ব পালন শেষে আমাকে আগের জায়গায় ফিরে যেতে হবে। তাই দায়িত্ব পালন করে আবার ফিরে যাচ্ছি নিজের জায়গায়। বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেয়ার দিন আমাকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় জানানো হয়েছে। আমার সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে। বাড়ি পর্যন্ত এসএসএফ এসে পৌঁছে দিয়ে গেছে। বাসায় আসার পরও তিন মাস এসএসএফ সদস্যরা আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছে। মাঝে মাঝে মনে হয় বিএনপি আমাকে না চাইতে অনেক কিছু্ দিয়েছে, তাদের জন্য আমি কিছুই করতে পারিনি।
এটা ভেবে কাজ করিনি। আমি আমার মতো করে কাজ করে গেছি। আমাকে প্রেসিডেন্ট নিয়োগের আগে একবার শুনেছিলাম আমাকে পিএসসির চেয়ারম্যান করা হতে পারে। পরে আবার আলোচনা হলো প্রেসিডেন্ট হওয়ার ব্যাপারে। আমার প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দের ছিল। না চাইতেই বিএনপি চেয়ারপারসন আমাকে অনেক দিয়েছেন। ওই সময়ে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য আরও একজনের নাম জোরালোভাবে আলোচনায় এসেছিল। তিনি হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ড. মনিরুজ্জামান মিয়া। এছাড়া আরও দু’একটি নাম হাল্কা আলোচনায় ছিল।
আমি সংবিধান মেনেই প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলাম। সংবিধানের বাইরে কোন কাজই আমি করিনি। প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে ভেবেছিলাম একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবো। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তাতো করতে পারলাম না। আমার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে চারজন উপদেষ্টা পদত্যাগ করলেন। এটা আমার জন্য সুখকর ছিল না। তারা পদত্যাগ না করলে অন্য রকম হতে পারতো। আমাকে সহযোগিতা না করে তারা তাদের মতো করে চালাতে চেয়েছিলেন। তারা একটি পক্ষের সুবিধা দেখতে চেয়েছিলেন এবং সেভাবেই কাজ করছিলেন। যখন পারছিলেন না তখন তারা পদত্যাগ করেন। তারা পদত্যাগ করে ভুল করেছিলেন। কারণ তারা পদত্যাগ না করলে ঠিকই তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হতো। আমি মনে করি তাদের পদত্যাগ না করে ধৈর্য ধরে দায়িত্ব পালন করে নির্বাচন করে দেয়া দায়িত্ব ছিল। চিন্তা করে দেখেন, তারা ওইদিন পদত্যাগ না করলে সঙ্কট এতটা বাড়তো না। তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হয়ে গেলে জরুরি অবস্থা জারি করার দরকারই হতো না।
এখন আমি কোন পেশার সঙ্গে যুক্ত নই। লেখালেখি করছি। এছাড়া আমার প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝে মাঝে যাই। সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত করি। এছাড়া মাঝে মাঝে সকালে মর্নিং ওয়াকে যাই। গুলশান লেকে ও গুলশান পার্কে যাই বেশি। এছাড়া নিরাপত্তাহীনতার কারণে যেতে পারি না কোথাও। বাসায় একটি সংবাদপত্র রাখি। সেটি পড়ি। টিভিতে মাঝে মাঝে খবর দেখি। দেশে কি হচ্ছে দেখি। এছাড়া বাসায় থাকলে দুপুরের পর বিশ্রাম নেই। নামাজের সময় নামাজ পড়ি। বই পড়ি। এভাবেই সময় কেটে যায়। বেড়াতে যাওয়া হয় না খুব একটা। কারণ অনিরাপদ মনে হয়। অনেকেই তাদের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য দাওয়াত দেন। সেখানেও যেতে পারি না। কারণ আমি জানি মানুষ অনেকেই আমাকে ভুল বুঝে থাকতে পারেন। কিন্তু যারা ভুল বুঝেছেন তাদের জন্য আমি বলতে চাই সেদিন জরুরি অবস্থা জারি না করে কোন উপায় ছিল না। দেশের স্বার্থে ও দেশের জনগণের স্বার্থেই জরুরি অবস্থা জারি করেছিলাম। তাদের এটাই ভাবতে বলবো জরুরি অবস্থা জারি না করলে অনেক খারাপ কিছু ঘটতে পারতো। তা থেকে আমি দেশকে বাঁচিয়েছি। আমাকে ভুল বোঝা ঠিক নয়।
উল্লেখ্য, প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের জন্য এখন নেই কোন পুলিশ, নেই কোন গানম্যান। এ কারণে তিনি নিরাপদ বোধ করেন না। মনে করেন, যে কোন সময় তার জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমার আজীবন নিরাপত্তা পাওয়ার কথা। কিন্তু দেয়া হচ্ছে না। আমি পুলিশ ও গানম্যান চেয়েছিলাম কিন্তু দেয়া হয়নি। আমার স্ত্রী যোগাযোগ করেছিলেন। এর আগের আইজিপির সঙ্গেও কথা বলেছেন, তাকে জানিয়েছেন হাইকমান্ডের নির্দেশেই তারা আমাকে পুলিশ কিংবা গানম্যান দিতে পারবেন না। নতুন আইজিপি দায়িত্ব নেয়ার পর আর আলোচনা করা হয়নি। ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার তিন মাস পর এসএসএফ চলে যাওয়ার পর এখন একাই থাকছি।