ভাবতে অবাক লাগে এ কোন আজব দেশে বাস আমাদের। যেন দু:স্বপ্নের মাঝে বিচরণ। যে দেশে প্রতিদিন ১০ জন মানুষ প্রাণ হারায় সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে, দিনে ৩ জন নারী হারান সম্ভ্রম, যার এক তৃতীয়াংশই শিশু, যে দেশে দিনে গড়ে গণধর্ষণের শিকার হয় ১ জন করে নারী, সে কেমন ডিজিটাল বাংলাদেশ। জাতীয় দৈনিকের সংবাদের ভিত্তিতে সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (এমআরটি) গবেষণায় ২০১০ সালের মে মাসের প্রথম ১৫ দিনে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের পরিসংখ্যানের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা মতে ১-১৫ মে পর্যন্ত শুধু খুনের ঘটনা ঘটেছে ১৫১টি, যা প্রতিদিন গড়ে ১০ জনেরও বেশি। এ ছাড়া আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। আত্মহত্যা করেছে ২০ জন। আর ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১০ শিশুসহ ৪২ জন। যার মধ্যে ১৪ জন গণধর্ষণের শিকার। আর বলাই বাহুল্য এগুলো শুধু পত্রিকার হিসেব, প্রকৃত অনেক অপরাধই থেকে যায় মিডিয়ার আড়ালে, অনেকেই কিল খেয়ে কিল হজম করে ফেলেন, লোকলজ্জার ভয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে মুখ বুজে সয়ে যায় সবকিছু। সেসব অজানা সত্যগুলো প্রকাশিত হলে পরিসংখ্যান যে কত ভয়াবহ হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। সবকিছু অন্তত এটুকু স্পষ্ট করে যে দেশে আর যাই থাকুক না কেন, আইন-শৃংখলা বলে কিছু নেই। দিন বদলের অলীক স্বপ্নে বিভোর করে যে সরকার গঠিত হয়েছিল তারা দিন বদলে সুদিন আনতে পারে নি, দিন বদলে নেমেছে কাল রাত্রি।
মুরুব্বীদের মুখে অনেক শুনেছি, বাকশালের বিভিষীকার কথা শুনে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছি, নিছক রাজনীতি, মিথ্যে গালগল্প বলে এড়িয়ে গেছি। অথচ সেই বাকশাল যখন আজ আজরাইলের বেশে দুয়ারে দাড়ায়ে, তখন বুঝতে বাকী থাকে না, কি ভুলই না করেছি আমরা। চারিদিকে শুরু হয়েছে রক্ষীবাহিনী স্টাইলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশলীগের হত্যা, গুপ্ত হত্যা, গণধষর্ণ, পৈশাচিক তান্ডব। এখন আর শোধরানোর কোন পথ নেই, হায়েনার হাতে রক্তাক্ত দেশ, বিপন্ন মানবতা। অদ্ভুত উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ, চলেছে পেছন পানে, ভিশন নাইনটিন সেভেনটি ফোর, ভিশন বাকশাল, ভিশন রক্ষী বাহিনী, ভিশন দূর্ভিক্ষপীড়িত বাসন্তীর বাংলাদেশ।
আসুন একবার ইতিহাসের পাতায় চোখ মেলে দেখে নেই কেমন ছিল সেসব দিনগুলো। হাজার হাজার করুণ কাহিনীর সৃষ্টি হয়েছে আওয়ামী লীগের শাসন আমলে বাংলাদেশে। যার সবগুলো গুমড়ে মরেছে নির্বিচারে, প্রকাশিত হতে পারেনি। পাবনার বাজিতপুরের কোরাটিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আলীর ছেলে রশীদকে রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিমর্মভাবে খুনের বিভৎস সে চিত্র মেজর ডালিমের সাইট থেকে তুলে ধরলাম।
আবদুল আলীর সাক্ষাৎকারটা ছিল নিম্নরূপ :-
“আমার সামনে ছেলেকে গুলি করে হত্যা করল। আমার হাতে কুঠার দিয়ে বলল, ‘মাথা কেটে দে, ফুটবল খেলবো।’ আমি কি তা পারি! আমি যে বাপ। কিন্তু অকথ্য নির্যাতন কতক্ষণ আর সহ্য করা যায়। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত নিজের হাতে ছেলের মাথা কেটে দিয়েছি। রশীদ নাকি রাজনীতি করত আমি জানতাম না। একদিন মাতু আর শাহজাহান এসে ধরে নিয়ে গেল। আওয়ামী লীগ অফিসে সারারাত ওরা ওকে বেদম মার মারল। সকালে বলল এক হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেবে। রশীদ স্বীকার করে এল এক হাজার টাকা দেবার। আমার কাছে টাকা চাইল। কিন্তু আমি দিন আনি দিন খাই, মজুর মানুষ। হঠাৎ তিন দিনের মধ্যে এক হাজার টাকা কোত্থেকে দেব? বললাম, তুই বরং পালিয়ে সিলেট চলে যা। রশীদ সিলেট চলে গেল। কিন্তু ১০-১২ দিন পর ফিরে এসে বলল, ‘বাবা মন মানেনা তোমাদের ফেলে থাকতে।’ সিলেট থেকে ফেরার পরই কঠিন অসুখে পড়ল। টাইফয়েড। অসুখ সারার পর একদিন তার মাকে বলল, ‘মা আজ ভাত খাব।’ তার মা শৈলমাছ দিয়ে তরকারী রানল। এমন সময় আওয়ামী লীগের পান্ডারা রক্ষীবাহিনীসহ বাড়ি ঘেরাও করল। অসুস্থ মানুষ। কোন রকমে বাড়ি থেকে বের হয়ে মাঠের দিকে দৌড় দিল। বাবা আমার জানত না সেখানেও ঘাপটি মেরে বসে আছে আজরাইল। পাষন্ডরা দৌড়ে এসে ধরল তাকে। রশীদ সিরাজের পা ধরে বলল, ‘সিরাজ ভাই, বিমারী মানুষ আমায় ছেড়ে দেন।’ ছাড়ল না। তারপর বাপ-বেটা দু’জনকেই বেধে মার শুরু করল। কত হাতে পায়ে ধরলাম। এরপর মাতু গুলি করল রশীদকে। ঢলে পড়ল রশীদ। আমি নির্বাক তাকিয়ে রইলাম। মরার পর একজন বলল, ‘চল ওর কল্লাটা নিয়ে যাই ফুটবল খেলব।’ মাতু বলল, ‘হ্যাঁ। তাই নেব। তবে ওর কল্লা আমরা কাটব না। তার বাবা কেটে দেবে।’ বলেই আমার হাতে কুঠার দিয়ে বলল কেটে দিতে। আমার মুখে রা নেই। বলে কি পাষন্ডগুলো? চুপ করে আছি দেখে বেদম পেটাতে শুরু করল। বুড়ো মানুষ কতক্ষণ আর সহ্য হয়। সিরাজ এসে বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে বলল, ‘এক্ষুনি কাট, নইলে তোকেও গুলি করব।’ ইতিমধ্যে দেড় ঘন্টার মত সময় পার হয়ে গেছে। বুঝতে পারলাম না কাটলে ওরা সত্যি আমাকেও মেরে ফেলবে কিনা? শেষে কুঠার দিয়ে কেটে দিলাম মাথা। নিয়ে সউল্লাসে চলে গেল তারা। আল্লায় কি সহ্য করব?”
A NIRMOMOTATO MODHYOZUGIO BORBOTAKEO HAR MANAY.ESOB THEKE MUKTIR UPAY KI?
[উত্তর দিন]
শাহরিয়ার উত্তর দিয়েছেন:
মে 18th, 2010 at 3:32 অপরাহ্ন
নিজে সচেতন হতে হবে, সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধের দেয়াল তুলে দিতে হবে।
[উত্তর দিন]
আবদুল আলীর সাক্ষাৎকারটি পড়ে আশ্চর্য হয়েছি এর সত্যতা নিয়ে ..কারণ
তিনি বলেছেন যে বালের লোকেরা তার ছেলেকে মরার পরে একজন বলল, ‘চল ওর কল্লাটা নিয়ে যাই ফুটবল খেলব।’ মাতু বলল, ‘হ্যাঁ। তাই নেব। তবে ওর কল্লা আমরা কাটব না। তার বাবা কেটে দেবে।’ বলেই আমার হাতে কুঠার দিয়ে বলল কেটে দিতে ।
আমার সন্দেহ এথানে যে জীবন্ত ছেলের গলা থাকতে বালের লোকেরা কেন তাকে দিয়ে তার মৃত ছেলের গলা কাটতে বলল ?
এ কেমন নিমর্মতা ?
এতে বালের স্বরূপ খুজে পেলামনা ।
[উত্তর দিন]
শাহরিয়ার উত্তর দিয়েছেন:
মে 18th, 2010 at 3:36 অপরাহ্ন
মুশফিক ভাই, আমার মনে হয় আওয়ামী লীগ শুরুতে বিষয়টি খেয়াল করে নি, মিশন শেষ করাই লক্ষ্য ছিল। কিলিং মিশন শেষ হওয়ার পরই বিনোদনের কথা মনে পরে, তাই জীবিত ছেলের মাথা না কেটে মৃত ছেলের মাথা কাটতে বাধ্য করেছে হয়তো।
তবে যাই হোক, সব সম্ভবের দল আওয়ামী লীগ, আর অবশ্যই তা হয় ঋণাত্মক।
[উত্তর দিন]
এ অনাকাঙ্খিত ভুলের জন্য ওরা নিশ্চয়ই পরবর্তীতে সেই কৃষকের কাছে ক্ষমা চেয়েছিল ।
[উত্তর দিন]