পটভূমি
এক)
অফিসের পাশেই একটা ডাকসাইটে রাজনৈতিক দলের অফিস। সব সময় হৈ হুল্লোর লেগেই আছে। প্রতিদিন কোন না কোন উৎসব আর অবশ্যই এন্তার খাবারের ছড়াছড়ি। দলে দলে লোকজন হায়েনার মতো হামলে পড়ে খাবারের প্লেটে, যেন মিনিট দশেক পড়েই কেয়ামত নাজিল হবে, যেন এ খাওয়াই জীবনের শেষ খাওয়া। খাওয়ার প্রতিযোগিতায় যতটুকু তারা খায় তার চেয়ে ঢের বেশি খাবার উচ্ছিষ্ট হিসেবে ফেলে দেয় নর্দমায়।
বেশ কিছুটা সময় ধরেই ঘুর ঘুর করছে একটা আট-ন বছরের কিশোর, মস্তবড় ভাঙ্গারীর ব্যাগে নু্যব্জ, হাতে ভাঙ্গারী টোকানোর রড জাতীয় কিছু একটা। এটা ওটা টোকাতে টোকাতে এক সময় ময়লার ভাগাড়ের কাছে এসে ওর চোখ পড়ে বিরানীর টিলার ওপর। অভুক্ত পেটে মুহুর্তেই ক্ষিধেটা চাগিয়ে ওঠে। বিরানীর ভাগাড় ঘেটে একটা রানের হাড় তুলে মুখে পুড়ে চুষতে থাকে। বাসী বিরানীর টক টক স্বাধ অভুক্ত কিশোরের কাছে অমৃত বলে মনে হয়।
আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকি অবহেলিত, বঞ্চিত, অভুক্ত এই শিশুটির দিকে। দারিদ্র দূরীকরণের গালভরা বুলি আর অর্থনীতির জটিল জটিল সংজ্ঞা কপচিয়ে আমরা আমাদের আদরে সন্তানদের ময়লার ভাগাড়ে টেনে এনেছি। শেরাটন-সোনারগাঁয়ে নিত্য যাতায়াত আমাদের, দুটাকার খাবার হাজার টাকায় কিনে খাই, সে খাবার মুখে তোলার সময় একবারও কি আমাদের চোখে অভুক্ত সন্তানদের ছবি ভেসে ওঠে না? সারাদিন রোজা শেষে গোগ্রাসে ইফতার করি, পারলে পুরো পৃথিবীটাই গিলে ফেলতে চাই, অথচ একবারও ওদের কথা ভাবার সময় পাই না, দারিদ্রের কষাঘাতে বসে যাওয়া চোখগুলো আমাদের বিবেককে একটুও নাড়া দেয় না। বিবেকহীন মানুষ আর পশুর মাঝে বিভেদটা কি তা কি আমরা কোনদিনই বুঝতে পারবো না?
দুই)
বাসন্তির নাম শুনেছি, ছবি দেখেছি, জেনেছি এক বাসন্তি কিভাবে কাঁপিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের হৃদয়। স্বাধীনতা পরবর্তী দুর্ভিক্ষে জেলে পাড়ার মেয়ে বাসন্তী পুরনো জাল গায়ে জড়িয়ে লজ্জা ঢাকার যে বৃথা চেষ্টা চালিয়েছিল তা বাংলাদেশের জন্য যে কতটা লজ্জার তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু সে অনেক পুরনো কথা। আমার জন্মেরও আগের কথা। বাস্তবে যে বাসন্তি আবার আমার সামনে এসে দাড়াবে তা কি স্বপ্নেও ভেবেছি?
বাসার গেটে পা দিয়েই বাসন্তির সামনে পরে গেলাম। বয়সের ভারে ন্যুব্জ, ঋজু শরীরে লাঠি ভর করে ভিক্ষের ঝুলি নিয়ে কাঁপা কাঁপা পায়ে আমার বাসা থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে। আমি বজ্রাহতের মতো হতভম্ব হয়ে দায়িয়ে থাকি। বাসন্তির পুরনো জালের মতোই পাতলা জাকাতের কাপড় পড়া বৃদ্ধার দিকে এক নজর তাকিয়েই লজ্জায় চোখ ফিরে আসে, ভেবে ভেবে হয়রান হই উন্নয়নের এই জোয়ারের মাঝেও মানুষ আজ কতটা অসহায়। ছাবির ত্যানার (মাছ ধরার জাল বিশেষ) মতো পাতলা জাকাতের কাপড়ে বাসন্তীদের লজ্জা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টায় বাংলাদেশের লজ্জা হয় কি না জানি না, তবে লজ্জায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। সাড়ে সাত হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোনটা জগদ্দল পাথরের মতো ভারী মনে হয়, মনে হয় এক কুড়ি বৃদ্ধার লজ্জার ঢাকার পয়সা বুঝি আমার এ মোবাইলটি দখল করে আছে। আমি বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত নই, তবু প্রয়োজনীয় এ মোবাইল বিলাসটাও আমাকে দগ্ধ করে।
আমি শাড়ি কেনার টাকা নিয়ে বাসন্তির অপেক্ষায় থাকি। শুক্রবার যায়, আবার শুক্রবার আসে, ভিক্ষুকের দল আসে, জোয়ান তাগড়া ভিক্ষুক মহিলারা পানের রস টেনে টেনে গল্পের সাথে ছোটে এ বাড়ি থেকে সে বাড়ি, কিন্তু বাসন্তি আর আসে না। জানি না বাসন্তি আদৌ বেঁচে আছে কি না, হয়তো নিজের লজ্জার সাথে সাথে পুরো দেশের লজ্জা ঢেকেছে বাংলাদেশের মাটি দিয়ে, কিন্তু আমি স্বস্তি পাই না। বারবার বাসন্তী এসে হানা দেয় আমার স্বপ্ন দুয়ারে।
বাসন্তীদের জন্য আমাদের করার কিছুই কি নেই?
যাত্রা হলো শুরু:
অবশেষে সিদ্ধান্তটি নিয়েই ফেললাম। আসলে এমন কিছু করা দরকার যাতে অভাবী গরীব লোকেরা নিজেরাই কিছু করে খেতে পারে তার বন্দোবস্ত করা। বিশেষ করে যেসকল লোক কাজ চায়, অথচ সামান্য পুঁজির অভাবে কাজ করতে পারছে না, তাই নিতান্ত বাধ্য হয়ে অন্যের দ্বারে হাত পাততে হচ্ছে তাদের জন্য স্থায়ী কোন সমাধান দরকার। আর এ জন্য ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর একটি অসাধারণ উদ্যোগ দেখে আমি অবাক হয়ে যাই।
২০০৬ সালে সাবেক সচিব, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর বোর্ড অব ডাইরেক্টরসের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ শাহ আবদুল হান্নান স্যার হোটেল শেরাটনের উইন্টার গার্ডেনে আর্তমানবতার সেবায় ওয়াকফ সংস্কৃতি চালুর আহ্বান জানান। আর মাত্র দশ হাজার টাকা প্রাথমিক জমা দিয়ে বাকী টাকা কিস্তিতে জমিয়ে ইসলামী ব্যাংকে ওয়াকফ একাউন্ট চালু করা যায় । আর এ একাউন্ট একটি চীরস্থায়ী একাউন্ট। এ একাউন্টের লভ্যাংশ ওয়াকিফের ইচ্ছানুয়ায়ী নির্দিষ্ট কোন সেবামূলক প্রতিষ্টানে বা খাতে জমা হতে থাকে।
অবশেষে বছরের শুরুতেই এগার হাজার পঁাচশত টাকার একটা ইনসেনটিভ বোনাস পেয়ে দশ হাজার টাকা দিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর ঝালকাঠী শাখায় একটি মুদারাবা ওয়াকফ ক্যাশ ডিপোজিট একাউন্ট খুলে ফেলি এবং কিস্তির মাধ্যমে এর পরিমাণ কয়েক লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এটি একটি চীরস্থায়ী একাউন্ট এবং এ একাউন্টের লভ্যাংশ প্রতিবছর তহুরা এবং তহুরা (জুনিয়র) ফাউন্ডেশনে জমা হবে। আর তা দিয়ে হবে স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
সংবিধান:
ধারাঃ-১ সংগঠনের নাম
এই সংগঠনের নাম হইবে “তহুরা এন্ড তহুরা (জুনিয়র)” ফাউন্ডেশন।
ধারাঃ ২ ফাউন্ডেশনের ঠিকানা ও কর্মপরিধি
ক) এই ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয় হইবে ঝালকাঠী জেলাধীন রাজাপুর উপজেলা সদর।
খ) ফাউন্ডেশনের ঠিকানা হইবে ‘ কলেজ রোড, ডাকঃ রাজাপুর, থানাঃ রাজাপুর, জেলাঃ ঝালকাঠী।
গ) ফাউন্ডেশনের কর্মএলাকা হইবে ঝালকাঠ জেলাধীন রাজাপুর উপজেলা। পরবর্তীতে ফাউন্ডেশন প্রয়োজনবোধে ইহার কর্ম পরিধি দেশ ব্যাপী বিস্তৃত করিতে পারিবে।
ধারাঃ ৩
ফাউন্ডেশনের বৈশিষ্ট্য হইবে
ক) ফাউন্ডেশনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সম্পূর্ণভাবে ইসলামী অর্থনীতির মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ করিবে।
খ) ইসলামী অর্থনীতি মূলনীতির পরিপন্থী কোন আইন এই ফাউন্ডেশন প্রনয়ণ করিতে পারিবে না। তবে রাষ্ট্রীয় কোন আইনের আওতায় কখনও এই ফাউন্ডেশন আসিলে তখণ তাহার যতটুকু সম্ভব ততটুকু গ্রহণ করিতে বাধ্য থাকিবে।
গ) এই ফাউন্ডেশন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হইবে।
ধারাঃ ৪
ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ক) সূদমুক্ত সমাজ গঠনে ও আর্তমানবতার সেবার উদ্দেশ্যে
১। প্রান্তিক চাষী, ক্ষুদ্র্ ব্যবসায়ীদের বিনাসূদে ঋণ প্রদান।
২ শিক্ষার আলো বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে নিরক্ষরতা দূরীকরণার্থে কর্জে হাসানা প্রদান।
৩। বেকারত্ব দূরীকরণার্থে মানবস্পদের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
৪। আধুনিক উৎপাদন উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহার বিষয়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দান ও বিনা লাভে কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দিয়ে উপকরণাদি ক্রয়ে সহায়তা করা।
৫। সুদমুক্ত সমাজ প্রতিষ্টার স্বার্থে বিভিন্ন কর্মসূচী প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
ধারাঃ ৫
ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে র উদ্দেশ্যে ফাউন্ডেশন নিম্নরূপ কার্যাবলী সম্পাদন করিতে প্রয়াসী হইবে।
ক) আর্তমানবতার সেবা দানের লক্ষ্যে এই ফাউন্ডেশন
১। বিনাসূদে স্বল্প মেয়াদী ঋণদান কর্মকান্ড পরিচালনা করিবে।
২। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে সর্বোচ্চ ১ বৎসরের জন্য ঋণ প্রদান করিতে পারিবে।
৩। প্রান্তিক চাষীদের কৃষি উপকরণ ক্রয়ের জন্য স্বল্প সময়ের জন্য বিনাসূদে ঋণ প্রদান করিতে পারিবে।
৪।রিক্সা, ভ্যান চালক ও ঠেলাগাড়ী চালকদের স্বল্পমেয়াদী ঋণ প্রদান করিয়া স্বাবলম্বী হইতে সাহায্য করা যাইবে।
৫। ঋণ দানের সময়সীমা সর্বনিম্ব একমাস এবং সর্বোচ্চ একবছরের বেশী হইবে না। তবে প্রকৃত কোন অসুবিধার কারণে কেই যদি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় তবে তাকে প্রয়োজনীয় সময় দান করা যাইবে তবে তাহা পাঁচ বৎসরের বেশী হইবে না। তবে বর্ধিত সময়ের মধ্যেও যদি প্রকৃত কারণে ঋণ শোধে ব্যর্থ হয় তবে ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ কমিটি সার্বিক বিষয়াদি বিবেচনা করিয়া প্রয়োজন বোধ করিলে ঋণ মওকুফ করিতে পারিবে।
ধারাঃ ৬
দাতব্য কর্মকান্ড
ক) অসহায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ের জন্য অনুদান প্রদান করিতে পারিবে।
খ) অসহায় শিক্ষার্থীদের জন্য পার্ট-টাইম কাজের সংস্থান করিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।
গ) গরীব ও অসহায় দুস্থ রোগীদের চিকিৎসার জন্য সহায়তা করিতে পারিবে।
ঘ) বিবাহ করিতে ইচ্ছুক গরীব ও অসহায় যুবকদের বিবাহের রেজিষ্ট্রেশন ফি প্রদান করিতে পারিবে।
ঙ) ইহা ছাড়া আকস্মিক দূর্ঘটনা যথা বন্যা, ঝড়, ঝলোচ্ছাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সাধ্যমত সহায়তা করিতে পারিবে।
ধারাঃ ৭ কার্যনির্বাহী পরিষদ
ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিম্নরূপ একটি কার্যনির্বাহী পরিষদ থাকিবেঃ
ক) সভাপতি ১ জন
খ) সহ-সভাপতি ১ জন
গ) সম্পাদক ১ জন
ঘ) কোষাধ্যক্ষ ১ জন
ঙ) সদস্য ২ জন
মোট ৬ জন
ধারাঃ ৮ কার্যনির্বাহী পরিষদের মেয়াদ
ক) কার্যনির্বাহী পরিষদের মেয়াদকাল হইবে প্রথম বৈঠকের দিন হইতে পরবর্তী দুই বৎসর। তবে কোন কারণে পরিষদ ভাঙ্গিয়া গেলে এবং পরবর্তী নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত তিন মাসের জন্য অন্তবর্তীকালীন পরিষদ থাকিবে।
খ) অন্তবর্তীকালীন পরিষদ সদস্য সংখ্যা হইবে তিন জন।
১। সভাপতি ২। সম্পাদক ৩। ১ জন মনোনীত সদস্য
গ) অন্তবর্তীকালীন পরিষদ পরবর্তী দুই বৎসরের জন্য একটি কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করিবেন মাত্র। তবে এই পরিষদ এই সময়ে রুটিন মাফিক দায়িত্বও পালন করিবে।
ধারাঃ ৯ কার্যনির্বাহী পরিষদের দায়িত্ব-কর্তব্য
ক। সভাপতিঃ কার্যনির্বাহী পরিষদের প্রধান হইবেন সভাপতি।
খ। সভাপতি কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।
গ। এই ফাউন্ডেশনের আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী সভাপতি কোন জরুরী অবস্থার সভা আহ্বান করিতে পারিবেন ।
ঘ। সভাপতি ফাউন্ডেশনের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধারী ব্যক্তি হিসেবে তিনি যে কোন জরুরী প্রয়োজনে (ঋণদান কর্মসূচী ছাড়া) যে কোন জরুরী ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবেন।
ঙ। ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমে জড়িত যে কোন ব্যক্তিকে প্রয়োজনে তিনি যে কোন সমে তলব করিতে পারিবেন এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবেন।
চ। সভাপতি পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোন ঋণ দান কর্মসূচীর প্রস্তাব পরিষদের সভায় উপস্থাপক করা যাইবে।
ধারাঃ ১০ সহ সভাপতি
ক। সভাপতির অনুপস্থিতিতে তিনি সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।
খ। সভাপতির অনুমোদন আছে কেবলমাত্র সেই সকল ক্ষেত্রে তিনি সভাপতির অনুপস্থিতিতে স্বাক্ষর করিতে পারিবেন।
গ। সভাপতির মৃত্যু কিংবা কোন কারণে সভাপতির পদ শূণ্য হইলে পরিষদের সদস্যদের সম্মতিক্রমে সহ-সভাপতি সভাপতির পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করিতে পারিবেন।
ঘ। সভাপতির অনুপস্থিতিতে সহ-সভাপতি সকল আদেশ জারি করিতে পারিবেন তবে তাহার ঐ সকল কাজের অব্যাবহতি পরেই ব্যবস্থাপনা কমিটির অধিবেশনে উপস্থাপন করিতে হইবে। অধিবেশন অনুমোদন না করিলে তাহা বাতিল বলিয়া পরিগণিত হইবে।
ধারাঃ১১ সাধারণ সম্পাদক
ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ কর্তৃত্বাধীনে সম্পাদক কমিটির কার্য পরিচালনা এবং এতদউদ্দেশ্যে তিনি নিম্ন লিখিত ক্ষমতা প্রয়োগ করিবেন।
ক। কমিটির কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ।
খ। সাধারণ সভা ও কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা আহ্বান করা এবং ঐ সকল সভার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরী করা।
গ। ফাউন্ডেশনের হিসাব নিকাশ প্রস্তুত করা ও সভায় উপস্থাপন করা।
ঘ। আর্থিক লেনদেনের হিসাব সংরক্ষণ করা।
ঙ। খরচের ভাউচার, নথিপত্র সংরক্ষণ করা।
চ। ক্যাশ বই ও বিভিন্ন ফাইলপত্র সংরক্ষণ করা।
ছ। সভার রেজুলেশন ও নোটিশ বহি লিখন ও বিতরণ করা।
জ। বার্ষিক সাধারণ সভায় পূর্ববর্তী বছরের প্রতিবেদন পেশ করা।
ঝ। সকল প্রকার পরিচালনা খরচ এবং ফাউন্ডেশনের তহবিল হইতে কর্মচারীদের বেতন, পথ খরচ, কাগজপত্রাদি ছাপানো, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি বাবদ আবশ্যকী খরচ করা।
ধারাঃ ১২ কোষাধ্যক্ষের ক্ষমতা ও কার্যাবলী
সভাপতি, সহ সভাপতি এবং সম্পাদকের অধীনে কোষাধ্যক্ষ নিম্নরূপ কর্তব্য সম্পাদন করিবেনঃ
ক। ফাউন্ডেশনের নগদ ও গচ্ছিত নগদ মূল্যবান সম্পদের হেফাজত করা।
খ। ফাউন্ডেশনের ব্যাংক একাউন্টের হিসাব রাখা।
গ। ফাউন্ডেশনের নগদ অর্থের হিসাব রাখা।
ঘ। ব্যাংক একাউন্টের সমস্ত দলিলপত্রাদী হেফাজত করা।
ঙ। সভাপতি ও সম্পাদকের নির্দেশ মোতাবেক বিভিন্ন প্রকার খরচ করা ও ফাউন্ডেশনের অস্থাবর সম্পত্তির হেফাজত করা।
ধারাঃ ১৩ ফাউন্ডেশনের আয়ের উৎস
ক। ফাউন্ডেশনের অর্থ একজন মাত্র ওয়াকিফের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর ঝালকাঠী শাখার মুদারাবা ওয়াকফ ক্যাশ ডিপোজিট একাউন্ট নম্বর ৫ এর তিন চতুর্থাংশ লভ্যাংশ।
খ। ধারা ১৩ ক ছাড়া অন্য কোন ওয়াকিফ এই ফাউন্ডেশনের শর্ত সাপেক্ষে অর্থ প্রদান করিতে পারিবেন।
গ। যে কোন ইমানদার ব্যক্তি কেবলমাত্র মানবতার সেবার উদ্দেশ্যে এই ফাউন্ডেশনের শর্ত মানিয়া এককালীন কিংবা চলমান প্রক্রিয়ায় অর্থ প্রদান করিলে তাহাও এই ফাউন্ডেশনের অর্থের উৎস বলিয়া পরিগনিত হইবে।
ধারাঃ ১৪ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন প্রক্রিয়াঃ
ক। যেহেতু এই ফাউন্ডেশনের অর্থ একজন ওয়াকিফের ব্যাংক একাউন্ট থেকে প্রাপ্ত তাই তাহার মনোনীত ব্যক্তিদের নিয়া কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত হইবে।
খ। যখন ওয়ারিশের সংখ্যা একাধিক হইবে তখন ওয়াকিফদের দ্বারা নির্বাচনের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত হইবে।
ধারাঃ ১৫ ফাউন্ডেশনের স্থায়ীত্বঃ
এই সংবিধানের ১৩ নং ধারার ক-গ পর্যন্ত উৎস বন্ধ হইলে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম বন্ধ হইয়া যাইবে।
ধারাঃ ১৬ ওয়াকিফের বিশেষ অধিকারের সংরক্ষণ
ক। ওয়াকিফের আর্থিক সঙ্কটে জীবিকা নির্বাহের ন্যূনতম প্রয়োজন মিটাইতে ফাউন্ডেশনের তহবিল হইতে অর্থ গ্রহণ করিতে পারিবেন। তাবে ওয়াকিফের মৃত্যুর পর তাহার কোন ওয়ারিশ এই সুযোগ গ্রহণ করিতে পারিবে না।
খ। ওয়াকিফ যদি ঋণ গ্রহণের পর ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য হারাইয়া দেউলিয়া হন তাহা হইলে তাহার দেউলিয়াত্ব মুছিবার জন্য ফাউন্ডেশনের তহবিল হইতে অর্থ গ্রহণ করিতে পারিবেন।
গ। ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত ঋণ কার্যক্রমে ওয়াকিফ/ওয়াকিফগণের ওয়ারিশ ও নিকট আত্মীয়গণ অগ্রাধিতার পাইবেন।
ধারাঃ ১৭ ব্যবস্থাপনা পরিষদ
ক। ওয়াকিফের সংখ্যা যখন বেশী হইবে তখন তাহাদের সকলেই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্য বলিয়া পরিগণিত হইবেন।
খ। এই ফাউন্ডেশনের শুভাকাঙ্খী ব্যক্তিবর্গ, মসজিদের ইমাম, আদর্শ শিক্ষক, ইসলামী অর্থনীতিবদ, ন্যায় বিচারক ব্যক্তিগণকে সংযুক্ত করিয়া ফাউন্ডেশনের ব্যভস্থাপনা পরিষদের সদস্য করা যাইতে পারিবে।
গ। ব্যবস্থাপনা পরিষদ গঠিত হইবার পর তাহাদের মতামতের ভিত্তিতে বা নির্বাচনের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনে কার্যনির্ভাহী পরিষদ গঠিত হইবে।
ঘ। ব্যবস্থাপনা পরিষদ গঠিত হইবার পর ফাউন্ডেশনের নির্ভাহী পরিষদ সম্পূর্ণভাবে ব্যবস্থাপনা পরিষদের নিকট সকল কার্যাবলীর জন্য দায়ী থাকিবেন।
ঙ। ফাউন্ডেশনের আর্থিক আয়-ব্যয়ের হিসাব (budget) ব্যবস্থাপনা পরিষদের অনুমোদন ব্যতীত কার্যকরী হইবে না।
চ। ব্যবস্থাপনা পরিষদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে কার্যনির্বাহী পরিষদের যে কোন সদস্যকে অপসারণ করিতে পারিবে তবে সংশ্লষ্ট সদস্যকে তাহার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিরুদ্ধে আত্মপক্ষ সমর্থনের যথেস্ট সুযোগ দিতে হইবে।
ধারাঃ ১৮ ব্যবস্থাপনা পরিষদের বিলুপ্তি
ক। ব্যবস্থাপনা পরিষদের কোন সদস্য উপযুক্ত কারন ব্যতিরেকে যদি পর পর তিনটি অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকেন তাহা হইলে তাহার সদস্যপদ বাতিল হইবে।
খ। কোন সদস্য সেচ্ছায় পদত্যাগ করিলে দতাহার সদস্যপদ বাতিল হইবে।
গ। কোন সদস্য মৃত্যুবরণ করিলে তাহার সদস্যপদ বাতিল হইবে।
ধারাঃ ১৯ ব্যবস্থপনা পরিষদের মেয়াদকাল
ব্যভস্থাপনা পরিষদের মেয়াদকাল হইবে প্রথম বৈঠক হইতে পরবর্তী তিন বৎসর। তবে উপযুক্ত কারণে কার্যনির্বাহী পরিষদ প্রধান এই পরিষদকে মেয়াদকাদ পূর্তির পূর্বেই ভাঙ্গিয়া দিতে পারিবেন।
ধারা ২০ নিরীক্ষা পর্ষদ
ক। ফাউন্ডেশনের আয় ব্যয় নিরীক্ষণের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি নিরীক্ষা পর্ষদ গঠিত হইবে।
খ। ওয়াকিফ কিংবা ব্যস্থাপনা পরিষদ এই নিরীক্ষা পর্ষদ গঠন/নির্বাচন করিবেন।
গ। নিরীক্ষণের রিপোর্ট ব্যস্থাপনা পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভায় পেশ করিতে হইবে।
ঘ। নিরীক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কার্যনির্বাহী পরিষদের সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে।
ঙ। নিরীক্ষায় কোন অনিয়ম ধরা পরিলে যাহার জন্য অনিয়ম হইয়াছে তাহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাপনা পরিষদ কিংবা ওয়াকিফ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবেন।
ধারাঃ ২২ কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠক
ক। কার্যনির্বাহী পরিষদের প্রতি মাসে অন্তত ১টি বৈঠক হইবে। বৈঠকের অন্তত ৪৮ ঘন্টা পূর্বে সম্পাদক সদস্যদের কাছে উপস্থিতির জন্য নোটিশ প্রদান করিবেন।
খ। বার্ষিক সাধারণ সভার বৈঠকের অন্তত এক সম্পাহ পূর্বে নোটিশ প্রদান করিতে হইবে।
ধারাঃ ২২ ব্যবস্থাপনা পরিষদের বৈঠক
ক। বৎসরে ব্যবস্থাপনা পরিষদের অনন্ত তিনটি অধিবেশন বসিবে। আধিবেশনের তারিখের অন্তত দশ দিন পূর্বে নোটিশ আকারে সদস্যদেরকে অবহিত করিতে হইবে।
খ। ব্যবস্থাপনা পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে কার্যনির্বাহী পরিষদের সকল সদস্যকে উপস্থিতির ব্যবস্থা থাকিতে হইবে।
ধারাঃ ২৩ নির্বাচন কমিশন
ক। ব্যবস্থাপনা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নির্বাচন পরিষদ গঠিনত হইবে।
খ। নির্বচান পরিষদের সদস্য সংখ্যা হইবে তিন।
ধারাঃ ২৪ নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব
নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থাপনা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠনের জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। এই উদ্দেশ্যে কমিশন
ক। ভোটার তালিকা প্রণয়ন করিবেন
খ। নির্বচানের তফসির ঘোষণা করিবেন
গ। নির্বাচনের উপকরণ তৈরী করিবেন।
ঘ। নির্বাচনের জন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করিবেন।
ঙ। নির্বাচন পরিচালনা করিবেন।
চ। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করিবেন।
ধারাঃ ২৫ সংবিধান সংশোধন
ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিষদের যৌথ অধিবেশনে উপস্থিতির তিন চতুর্থাংশ সদস্যের সম্মতিতে এই সংবিধানের যে কোন ধারা বা শব্দ সংযোজন কিংবা বিয়োজন করিতে পারিবেন।
পরিশিষ্ট
১। ওয়াকিফ- যিনি এই ফাউন্ডেশনের অর্থদাতা তাকে বুঝাইবে।
২। কার্যনির্বাহী পরিষদ- যারা ফাউন্ডেশনের executive body হিসেবে নির্বাহী দায়িত্ব পালন করিবেন।
৩। ব্যবস্থাপনা পরিষদ- যারা ফাউন্ডেশনের legislative body হিসেবে কার্যনির্বাহী পরিষদকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা ও ফাউন্ডেশনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রনয়ন করিবেন।
৪। সংবিধান বলিতে এই ফাউন্ডেশনের জন্য প্রণীত নিয়মাবলীর সমাবেশ বা গঠনতন্ত্রকে বুঝাইবে।
Simplify the process of getting your ESA letter with esa-letter.com. Their licensed therapists provide emotional support animal letters accepted by landlords and airlines across the country. Visit esa-letter.com for a hassle-free experience and professional assistance tailored to your needs.